পৃষ্ঠাসমূহ

Search

Kobita



আমি চেয়ে আছি

আমি চেয়ে আছি তোমাদের সবা-পানে।
স্থান দাও মোরে সকলের মাঝখানে।
নীচে সব-নীচে এ ধূলির ধরণীতে
যেথা আসনের মূল্য না হয় দিতে,
যেথা রেখা দিয়ে ভাগ করা নাই কিছু,
       যেথা ভেদ নাই মানে আর অপমানে।
       স্থান দাও সেথা সকলের মাঝখানে।

যেথা বাহিরের আবরণ নাহি রয়,
যেথা আপনার উলঙ্গ পরিচয়।
আমার বলিয়া কিছু নাই একেবারে
এ সত্য যেথা নাহি ঢাকে আপনারে,
সেথায় দাঁড়ায়ে নিলাজ দৈন্য মম
       ভরিয়া লইব তাঁহার পরম দানে।
       স্থান দাও মোরে সকলের মাঝখানে।



১৫ আষাঢ় ১৩১৭
কাব্যগ্রন্থঃ গীতাঞ্জলি
রচনা সংখ্যাঃ ১০৪

  _____________________________________________________

 

অন্তর মম বিকশিত করো

অন্তর মম বিকশিত করো
     অন্তরতর হে।
নির্মল করো, উজ্জ্বল করো,
    সুন্দর কর হে।
           জাগ্রত করো, উদ্যত করো,
                নির্ভয় করো হে।
      মঙ্গল করো, নরলস নিঃসংশয় করো হে।
           অন্তর মম বিকশিত করো,
                অন্তরতর হে।

যুক্ত করো হে সবার সঙ্গে,
  মুক্ত করো হে বন্ধ,
সঞ্চার করো সকল মর্মে
  শান্ত তোমার ছন্দ।
      চরণপদ্মে মম চিত নিঃস্পন্দিত করো হে,
          নন্দিত করো, নন্দিত করো,
              নন্দিত করো হে।
          অন্তর মম বিকশিত করো
               অন্তরতর হে।



শিলাইদহ
২৭ অগ্রাহায়ণ ১৩১৪
কাব্যগ্রন্থঃ গীতাঞ্জলি
রচনা সংখ্যাঃ ৫ 
____________________________________________________________________________________

হায় চিল

হায় চিল, সোনালী ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে
তুমি আর কেঁদোনাকো উড়ে উড়ে ধানসিড়ি নদীটির পাশে!
তোমার কান্নার সুরে বেতের ফলের মতো তার ম্লান চোখ মনে আসে।
পৃথিবীর রাঙ্গা রাজকন্যাদের মতো সে যে চলে গেছে রূপ নিয়ে দূরে;
আবার তাহারে কেন ডেকে আনো?
কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে!

হায় চিল, সোনালী ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে
তুমি আর কেঁদোনাকো উড়ে উড়ে ধানসিড়ি নদীটির পাশে!
____________________________________________________________________________________

দুর্ভাগা দেশ

হে মোর দুর্ভাগা দেশ, যাদের করেছ অপমান,
অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান।
              মানুষের অধিকারে
              বঞ্চিত করেছ যারে,
সম্মুখে দাঁড়ায়ে রেখে তবু কোলে দাও নাই স্থান
অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান।

মানুষের পরশেরে প্রতিদিন ঠেকাইয়া দূরে
ঘৃণা করিয়াছ তুমি মানুষের প্রাণের ঠাকুরে।
              বিধাতার রুদ্ররোষে
              দুর্ভিক্ষের-দ্বারে বসে
ভাগ করে খেতে হবে সকলের সাথে অন্নপান।
অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান।

তোমার আসন হতে যেথায় তাদের দিলে ঠেলে
সেথায় শক্তিরে তব নির্বাসন দিলে অবহেলে।
              চরণে দলিত হয়ে
              ধূলায় সে যায় বয়ে -
সেই নিম্নে নেমে এসো, নহিলে নাহি রে পরিত্রাণ।
অপমানে হতে হবে আজি তোরে সবার সমান।

যারে তুমি নীচে ফেল সে তোমারে বাঁধিবে যে নীচে,
পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে।
              অজ্ঞানের অন্ধকারে
              আড়ালে ঢাকিছ যারে
তোমার মঙ্গল ঢাকি গড়িছে সে ঘোর ব্যবধান।
অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান।

শতেক শতাব্দী ধরে নামে শিরে অসম্মানভার,
মানুষের নারায়ণে তবুও কর না  নমস্কার।
              তবু নত করি আঁখি
              দেখিবার পাও না কি
নেমেছে ধূলার তলে হীনপতিতের ভগবান।
অপমানে হতে হবে সেথা তোরে সবার সমান।

দেখিতে পাও না তুমি মৃত্যুদূত দাঁড়ায়েছে দ্বারে -
অভিশাপ আঁকি দিল তোমার জাতির অহংকারে।
              সবারে না যদি ডাকো,
              এখনো সরিয়া থাকো,
আপনারে বেঁধে রাখো চৌদিকে জড়ায়ে অভিমান -
মৃত্যু-মাঝে হবে তবে চিতাভস্মে সবার সমান।
____________________________________________________________________________________
 

পউষ

পউষ এলো গো!
পউষ এলো অশ্রু-পাথার হিম পারাবার পারায়ে
ঐ যে এলো গো-
কুজঝটিকার ঘোম্‌টা-পরা দিগন্ত-রে দাঁড়ায়ে।।
সে এলো আর পাতায় পাতায় হায়
বিদায়-ব্যথা যায় গো কেঁদে যায়,
অস্ত-বধূ (আ-হা) মলিন চোখে চায়
পথ-চাওয়া দীপ সন্ধ্যা-তারায় হারায়ে।।

পউষ এলো গো-
এক বছরের শ্রানি-পথের, কালের আয়ু-ক্ষয়,
পাকা ধানের বিদায়-ঋতু, নতুন আসার ভয়।
পউষ এলো গো! পউষ এলো-
শুক্‌নো নিশাস্‌, কাঁদন-ভারাতুর
বিদায়-ক্ষণের (আ-হা) ভাঙা গলার সুর-
‘ওঠে পথিক! যাবে অনেক দূর
কালো চোখের করুণ চাওয়া ছাড়ায়ে।।’
____________________________________________________________________________________
 

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন